বসন্তের জন্য অপেক্ষা

Image
  প্রিয় ঋতু কি কেউ জিজ্ঞেস করলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়বো। কোনটা প্রিয় ঋতু? সবগুলোই যে প্রিয়! আমার বর্তমান ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম অঙ্গরাজ্য ডেলওয়্যার।এই ডেলওয়্যারে প্রতিটা মৌসুম ভিন্নতা নিয়ে আসে। যেহেতু এখানে প্রতিটা ঋতুর একটা   স্বতন্ত্র অস্তিত্ব  আছে তাই তাদের প্রতি আমার পৃথক পৃথক ভালোবাসা জন্মে গেছে। প্রতিটা ঋতুই নিয়ে আসে অনন্য আমেজ, প্রকৃতি সাজে অনুপম সাজে। সেই সাজ  যেন অন্য ঋতুগুলোর চেয়ে একেবারে ভিন্ন। এই যেমন এখন গুটিগুটি পায়ে এসেছে ঋতুরানী বসন্ত: আকাশে-বাতাসে ঝঙ্কৃত হচ্ছে তার আগমনী সুর, আমি সেই সুর শুনতে পাই।  সবগুলো ঋতু প্রিয় হলেও নিজেকে শীতকালের বড় ভক্ত বলে দাবী করতে পারিনা। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, তার পক্ষে ঠান্ডা আবহাওয়াতে মানিয়ে নেওয়া কার্যত কষ্টকর, বিশেষত সেই শীতকাল যদি চার-পাঁচ মাস স্থায়ী হয়। তাই শীতকাল বিদায় নিয়ে যখন বসন্তকাল আবির্ভূত হয় তখন এক একদিন জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবি, "এত্ত সুন্দর একটা দিন দেখার সৌভাগ্য হলো আমার!" শোবার ঘরের জানলা দিয়ে প্রভাতের বাসন্তী রঙের রোদ এসে ভাসিয়ে দেয় কাঠের মেঝে, সাদা আরামকে

আসুন, আবেগ সংরক্ষন করি

আমি মানুষ হিসেবে আবেগী, কিন্তু অসংযত আবেগ আমার নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের অনেক বড় ভক্ত। বাঘদের খেলা থাকলে রাতে মাত্র তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে, টিভির সামনে বসে চিৎকার দিয়ে গলা, আর হাততালি দিয়ে দু’হাত ব্যথা করে ফেলি। কিছুক্ষণ পর পর ফেইসবুকে দেই স্ট্যাটাস আপডেট। না দিয়ে থাকতে পারিনা যে! কিন্তু অন্যান্য অনেক ভক্তের মতন প্রতিদ্বন্দ্বীকে হীন করে দিনরাত সোশ্যাল মিডিয়া অথবা বাস্তব জীবনে কথা বলে যেতে পারিনা। অন্যদের এসব কর্মকান্ড দেখেও বিরক্ত হই। লেবু কচলে তিতা করে ফেললে সেটি ভাল লাগবার কথাও নয়! এক বাঁশ নিয়ে যা শুরু হয়েছে তাতে পৃথিবীর অবশিষ্ট পান্ডারা শঙ্কিত যে শুধু বাংলাদেশীদের কারণেই তাদের নিকট ভবিষ্যতে খাদ্য সংকটে পড়তে হতে পারে। সব বাঁশ নিয়ে যে বসে আছে বাংলাদেশীরা!
যেখানে জাতীয় দলের অধিনায়ক বলছেন যে তিনি প্রতিশোধে বিশ্বাস করেন না সেখানে আমরা দর্শকরা প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছি। দমকল বাহিনীরও সাধ্য নেই আমাদের এই আগুন নেভায়। ভাগ্যিস আমরা মাঠে খেলি না, খেললে ক্রিকেটের মান-সম্মান বলে আর কিছুই বাকি থাকত না। ক্রিকেট হয়ে যেত হাতাহাতির খেলা! ম্যাচ জিতলে আমরা হয়তো নেমে পড়তাম বাঁশ হাতে, প্রতিদ্বন্দীকে বাঁশ দেয়ার জন্য। বাঁশ না দিলে আর মজা কি! আজকালকার ছেলে-মেয়েদের ভাষার ব্যবহার দেখে আমি চমকে উঠি। এরা কেমন মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছে? এত রাগ, আবেগ আর উত্তেজনা কি ভাল কিছু বয়ে আনতে পারে?
আবেগ থাকা ভাল, মানুষ আবেগহীন হবে এটা মেনে নেয়া যায়না কিন্তু অতিরিক্ত আবেগ কি ভাল? আর আমাদের ভিতর সঞ্চিত এত আবেগই বা কোথায় হারায় যখন আমাদের সামনে সংঘটিত হয় কোন অন্যায় ? যখন আমাদের মেয়েরা, বোনরা অপমানিত হয় রাস্তায় দিনে-দুপুরে? কোথায় আমরা তো তখন আবেগী হয়ে প্রতিবাদ করিনা। নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে দেখি অথবা না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাই। মুহুর্তের জন্য আমরা শুধু আবেগহীন নই, অন্ধ এবং বধিরও হয়ে যাই। আবেগের কি তবে অন-অফ স্যুইচ আছে, সুবিধামত আমরা যেটিকে চালনা করি? হবে হয়তো!
কিছু মানুষের জন্য ইদানিং দেশের জয়ের স্বাদটা যেন ভাল করে নিতেই পারিনা। জয়ের স্বাদ পেতে সোশ্যাল মিডিয়াতে গেলে মনে হয় টেবিলচামচে করে কেউ কুইনাইন অথবা উচ্ছের রস গিলিয়ে দিচ্ছে। ট্রোল নামক কি এক পোকা আমাদের মাথায় ঢুকেছে যে পোকা বংশ বিস্তার করেই চলেছে প্রতিনিয়ত। এই পোকা মাথা থেকে চিমটা দিয়ে বের করা দরকার, পুরোপুরি বের না করলেও এর নিধন শুরু করা জরুরি, জরুরি আমাদের ছেলেদের ভাষাশিক্ষা দেয়ারও। এরা কেন ভুলে যায় যে একটি দেশের প্রতিটি মানুষ সে দেশের প্রতিনিধি?
এখন অনেকেই হয়তো বলবেন মওকা মওকা ভিডিওটির কথা। ছোটবেলায় একটি কবিতা পড়েছিলেন, মনে আছে? সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ’উত্তম ও অধম’। যদি ভুলে গিয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য আমি দু:খিত কারণ ঐ কবিতাটিতে খুব সুন্দর একটি উপদেশ ছিল। না, আমি ভারত বা অন্য কোন দেশকে নিম্ন শ্রেনীর কোন জীবের সাথে তুলনা করছি না, একটি দেশ অথবা জাতিকে আমি এত বড় অবমাননা করবার ধৃষ্টতা কখনই দেখাবো না। বাস্তব জীবনে আমার বেশ কয়েকজন ভারতীয় বন্ধু আছেন এবং তারা বাংলাদেশের শেষ দু’টি জয়ের পর আমাকে অভিনন্দন জানাতে ভুলেননি।
আমরা কথায় নয়, আমাদের পরিচয় দিব কাজে, আমাদের খেলাতে। শুধু শুধু কুরুচীপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করে নিজেকে আর নিজের দেশকে ছোট করবার আসলেই কি কোন প্রয়োজন আছে? আসুন, বাঁশ দিয়ে যদি কিছু করতেই চাই, তাহলে সাঁকো তৈরী করি, বন্ধুত্বের সাঁকো, দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে দেই আমরা মানুষ হিসেবে হতে পারি ধৈর্যশীল, বন্ধুত্বপরায়ন এবং অমায়িক… ঠিক আমাদের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক এবং অন্যান্য খেলোয়ারদের মতন। আর আমাদের আবেগগুলোকে সংরক্ষন করি ভবিষ্যতের কোন ভাল কাজের জন্য।
BDNEWS24
Writer's Page

Comments

Popular posts from this blog

A personal journey through the captivating landscape of Bengali literature

Cashmere: Soft, luxurious, sought-after

January Blues